ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত : ফাজায়েলে আমল বা তাবলীগী নিসাব সম্পর্কে ডাঃ জাকির নায়েক এর মতামত
ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত ,
ফাজায়েলে আমল বা তাবলীগী নিসাব সম্পর্কে ডাঃ জাকির নায়েক এর মতামত
প্রশ্নঃ আমার প্রশ্ন জাকির ভাইয়ের কাছে , যে আমাদের এখানে ইসলামকে একটি নতুন চেহারা দেয়া হয়েছে যা তাবলীগ নামে পরিচিত।
যেখানে মুসলিমরা তাদের ঘর বাড়ি ছেড়ে চল্লিশ (৪০) দিনের জন্য মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়ায় এবং সেখানে এমন এক বই পড়া হয় , যেটার সাথে কোরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে খুব একটা সম্পর্ক নেই , সেই বইয়ে জাল হাদীসে ভরপূর , যা ফাজায়েল আমাল বা তাবলীগী নিসাব নামে পরিচিত।
দয়া করে আপনি এই বিষয়ে কিছু বলুন।
ডাঃ জাকির নায়েকের উত্তরঃ
সাধারণত এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর আমি খুব একটা দেই না। যেহেতু এটা এই অনুষ্ঠানের শেষ প্রশ্ন , তাই এর উত্তরটি দিচ্ছি ; যাতে মানুষ এই অভিযোগ না করতে পারে যে আমি প্রশ্নকার উত্তরটি দেইনি।
উনি প্রশ্ন করেছেন মুসলিদের মধ্যে তাবলীগ জামাত নামে যে দলটি রয়েছে সেই সম্পর্কে।
যেখানে তাবলীগী নিসাব (ফাজায়েল আমল) নামক বইটি পড়া হয় , যার মধ্যে বিভিন্ন হাদীসের মিশ্রণ রয়েছে।
হ্যাঁ , আপনি ঠিক বলেছেন ,
সেটাকে তাবলীগী নিসাব বা ফাজায়েল আমল বলা হয় যা যাকারিয়া সাহেব লিখেছেন।
এর মধ্যে মিশ্রণ রয়েছে , সহীহ হাদীস আছে , যঈফ হাদীস আছে , জাল হাদিসও আছে , আবার কাহিনী কিচ্ছাও আছে। ফলে এই বইয়ের সকল দলীল গুলো মেনে নেওয়া বা আমল করা ঠিক হবে না।
আমাদের আমল করতে হবে শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকে। সহীহ হাদিসই আমাদের পথ ও দলীল হবে।
যদি কোন যইফ হাদীস , কোন সহীহ হাদীসের পক্ষে বা সমর্থনে তাহলে অন্য কথা।
এছাড়া বাকী যঈফ ও জাল হাদীস. গুলোকে পথ ও দলীল মনে করা , এটা ইসলামের শরীয়তের পরিপন্থী।
আমল করতে হবে কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা।
এটা খুবই আফসোসের বিষয় যে , কিছু মুসলিমরা তাবলীগী নিসাব (ফাজায়েল আমল) এর মত বই গুলোকে কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে , ও পাঠ করে থাকে , যা ভুল। বরং আমাদেরকে কোরআন ও সহীহ হাদীসকে গুরুত্ব দিতে হবে ,
যেমনঃ সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম ; এই দুই গ্রন্থের সবগুলো হাদিসই সহীহ , সুতরাং এই দুই গ্রন্থের হাদীসগুলো নিয়ে সংশয় থাকার কোন প্রয়োজন নেই কারন সবগুলো হাদীসই সহীহ। এরপর আপনি পড়তে পারেন সুনানে আবু দাউদ , তিরমিযী শরীফ , সুনানে ইবনু মাজাহ ,
সুনানে নাসাঈ শরীফ। এর মধ্যে অধিকাংশ হাদীস সহীহ , কিন্তু সবগুলো না বোখারী ও মুসলিমের মত।
এবার বলি ৪০ দিন চিল্লা সম্পর্কে।
আমি (ডাঃ জাকির নায়েক) কোরআনের এমন কোন আয়াত জানি না যেখানে বলা হয়েছে ৪০ দিন এর জন্য চিল্লা দিতে হবে , এমন কোন সহীহ হাদীস ও জানি না যেখানে এই চিল্লা সম্পর্কে বলা হয়েছে , যেটাকে গাস্ত ও বলা হয়ে থাকে। যেমন বছরে ৪০ দিন বা মাসে ৩দিন , জীবনে অন্তত ১ বার। এগুলো কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু আমরা আমাদের মুসলিম ভাইদের সাথে ভালোবাসার সহিত ব্যাবহার করা উচিত।
আফসোসের বিষয় এই যে , আমাদের মুসলিম ভাইদের মধ্যে গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি নেই ,
এর অন্যতম কারন হলো স্বল্প জ্ঞান। সুতরাং তাদের সহিত হিকমার সাথে কথা বলতে হবে এবং তাদের (চিল্লা পন্থিদের) কোরআন ও সহীহ হাদীসের পথে আসার জন্য দাওয়াত দিতে হবে।
যেভাবে আমি বলি - এসো সেই দিকে যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এক (সূরা আলে ইমরান ,
আয়াত নং- ৬৪)। এই আয়াত মুসলিমদের জন্যও প্রযোজ্য। এসো সেই দিকে যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে মিল ও এক। সেই মিল জিনিষটা কি? সেটা হলো কোরআন ও সহীহ হাদীস। এইবার এই দুটোর উপর আমল করো। বড়ই আফসোসের বিষয় যে তাদের সাথে আমরা হিকমত ব্যাবহার করি না। এই জন্যই এত ভেদাভেদ বা সমস্যা। আমি একটা লেকচার দিয়েছিলাম ,
যার নামঃ " মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একতা " ।
এই লেকচারে আমি বলে দিয়েছি যে ক ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করতে হবে।
ইনশা-আল্লাহ সকল মুসলিমরা গবেষণা করবে। এবং আল্লাহ বলেছেনঃ
** আর তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ়ভাবে আল্লাহ্র রজ্জু (কোরআন ও সহীহ হাদীস) ধারণ
কর , এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না। (সূরা আলে ইমরান , আয়াত নং- ১০৩)
আল্লাহ্র রজ্জু কি? কোরআন আর সহীহ হাদীস। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে ,
আমরা কোরআন অর্থ বুঝে পড়ি না। কিছু সংখ্যক মুসলিম কোরআন অর্থ সহ জানে ,
বাকিরা শুধু না বুঝেই তিলাওয়াত করে। কিন্তু শুধু তিলাওয়াত করলাম এবং না বুঝার কারনে আমল করতে পারলাম না , তাহলে এতে কিন্তু আপনার জান্নাতে যাওয়ার গ্যারান্টি নেই। তিলাওয়াত করেন , পাশাপাশি অর্থ সহ তরজমা পড়েন। উর্দুতে পড়েন , হিন্দিতে পড়েন ,
ইংরেজীতে পড়েন , যে ভাষা আপনি সবচেয়ে ভাল বুঝেন সেই ভাষাতেই পড়েন।
বোখারী ও মুসলিম শরীফের তরজমা পড়েন। অর্থ সহ বুঝে পড়ো আর আমল করো।
বড়ই আফসোসের বিষয় আমরা কোরআন কে অর্থ বুঝে পড়ি না, এজন্য যে কেউ আপনাকে আলেম পরিচয় দিয়ে অন্য পথভ্রষ্টের জায়গায় নিয়ে যায়। যে কেউ ফতোয়া দিয়ে দিলো আর আপনারাও তা মেনে নিলেন।
আমি ডাঃ জাকির নায়েক ইসলামের মধ্যে কিছু বললে সেটা মূল্যহীন। এই জন্য আমি রেফারেন্স
দিয়ে বলি যে আমি না বরং আল্লাহ বলেছেন , এই সুরার ঐ আয়াতে।
সুতরাং আমি নিজ থেকে কিছু বললে সেটা মূল্যহীন।
মানতে হবে শুধুমাত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের কথা। সুতরাং যে কোন আলেম-ই যদি আপনাকে কিছু বলে তাহলে আপনি তার কাছে সেটার প্রমান চান বা প্রমান নিন এবং দেখেন
সেটা সহীহ সনদে বর্ণিত কি না।
আল্লাহ বলেনঃ
**
যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক , তাহলে প্রমান নিয়ে এস।(সূরা বাকারাহ , আয়াত নং- ১১১)
যদি আপনি সহীহ সনদে প্রমান পেশ করে বলেন , আপনি ডাঃ জাকির নায়েক ৪০
দিনের চিল্লায় যাবেন।
আমি (ডাঃ জাকির নায়েক) বলবঃ অবশ্যই , কেন নয়।
যদি আপনি সহীহ সনদে প্রমান পেশ করে বলেন , আপনি ডাঃ জাকির নায়েক ৪
মাসের চিল্লায় যাবেন।
আমি (ডাঃ জাকির নায়েক) বলবঃ অবশ্যই , কেন নয়।
আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়েছেন।
0 Comments:
Post a Comment